বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬

সরাইলের বিশ্বখ্যাত গ্রে-হাউন্ড কুকুর এখন বিলুপ্তির পথে

সরাইলের বিশ্বখ্যাত গ্রে-হাউন্ড কুকুর এখন বিলুপ্তির পথে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার :- সরাইল উপজেলার বিরল প্রজাতির গ্রে-হাউন্ড কুকুরের পরিচিতি উপমহাদেশ জুড়ে। দেশ বিদেশ থেকে সৌখিন লোকজন এখানে আসে কুকুর কিনতে। কিন্তু সরাইলের এই কুকুর এখন বিলুপ্তের পথে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য না পাওয়া গেলে এই কুকুরের প্রজাতি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আগে উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে কেউ শখের বশে, আবার কেউ আভিজাত্যের জন্য পালন করত বিখ্যাত এই কুকুর। কিন্তু কালের আবর্তে আজ সবই অতীত। বিখ্যাত গ্রে-হাউন্ড কুকুর দেখতে অন্যান্য কুকুরের চেয়ে কিছুটা আলাদা। মুখটা অনেকটা শেয়ালের মত। কান ও লেজ লম্বা। রীতিমত দুধ ভাত আর মাছ মাংস খাইয়ে এদেরকে বড় করা হয়। শিকারে এই কুকুর খুবই পারদর্শী। শিয়াল, বন বিড়াল, বাঘদাস শিকারের এরা পটু। চোর-ডাকাতরা এই কুকুরের নাম শুনলেই আতকে উঠে। তাই এসব গ্রে-হাউন্ড কুকুরের দামটাও বেশি। বাচ্চা কুকুর ২০/২৫ হাজার আর বড় কুকুর ৬০/৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সরাইলের বিখ্যাত এই কুকুরের উৎপত্তি সম্পর্কে এলাকায় নানা জনশ্রুতি আছে। বিভিন্নজন বিভিন্ন ধরনের কথা বলেন। কিভাবে এই কুকুর সরাইলে আসে তার সঠিক ইতিহাস বলতে পারেনি কেউ। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে বলেন। কুকুর পালনকারী অজিত লাল দাস বলেন, ঠাকুরদার মুখে শুনেছি, বহুকাল আগে সরাইলের এক দেওয়ান তার হাতি নিয়ে সরাইল পরগনা থেকে কলিকাতা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক বাড়িতে তিনি একটি কুকুর দেখতে পান। কুকুরটি নেয়ার জন্য তার শখ হয়। দেওয়ান কুকুরের মালিককে কুকুরটি তাকে দিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু রাজী হয়নি কুকুরের মালিক। অনেক বলার পরও কুকুরের মালিক কুকুরটি দিতে রাজী না হলে দেওয়ান হাতির বিনিময়ে মালিকের কাছ থেকে কুকুরটি নিয়ে আসেন। সেই কুকুর এক সময় হাত বদলে তার দাদা গঙ্গাচরণ রবিদাসের কাছে চলে আসে। আর শিয়ালের সাথে মিলনের ফলে সৃষ্টি বর্তমান এই জাতের কুকুর। আবার অনেকে বলেন একবার দেওয়ান তার শখের কুকুরটিকে নিয়ে শিকার করতে বনে যান। সেখানে গিয়ে কুকুরটি হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজাখুজির পর তিনি দেখতে পান বনের ভেতরে একটি বাঘের সাথে কুকুরটির মিলন হচ্ছে। পরে এই কুকুর থেকেই শিকারি জাতের এই গ্রে-হাউন্ড কুকুরের উৎপত্তি। এলাকাবাসী জানান, আগে সরাইলের বিভিন্ন এলাকায় লোকজন বাণিজ্যিকভাবে এই কুকুর পালন করলেও বর্তমানে উপজেলার নোয়াগাও গ্রামের অজিত লাল দাসই আসল গ্রে-হাউন্ড কুকুর পালন করেন। সরেজমিনে ওই বাড়িতে যেতেই শোনা যায় কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক। নাম ধরে ডাকতেই ছেড়ে রাখা সব কুকুর চলে আসে পালনকারী অজিত লাল দাসের সামনে। অজিত লাল জানান, টাইগার, মধু, পপি, কালী, লালী, টমি, কালা সহ বিভিন্ন নাম আছে এই কুকুরের। জন্মের পর আচরন অনুযায়ী তাদের নাম রাখা হয়। বর্তমানে তার বাড়িতে ছোট বড় মিলিয়ে ২০ টি কুকুর আছে। ৫টি ছোট বাচ্চার জন্য তার প্রয়োজন হয় ২ লিটার দুধ। তাছাড়া ভাল দাম পেতে মাছ, মাংস সহ উন্নত খাবারও দিতে হয়। তিনি বলেন, ৩ থেকে ৫ মাসের একটি বাচ্চা কুকুর ২০/২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর বড় কুকুরের দাম উঠে ৬০/৬৫ হাজার টাকায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নিজে যে ঘরে থাকেন সেই ঘরে কুকুর রাখা নিরাপদ নয়। কারন প্রায়ই দামি এই কুকুর নিয়ে যেতে চুর ডাকাত হানা দেয়। তাছাড়া জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিক মত খাবার দেওয়া তার জন্য কষ্ট হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, সরকারী পৃষ্টপোষকতা ও সাহায্য পাওয়া গেলে বিখ্যাত এই কুকুরের প্রজাতি ধরে রাখা সম্ভব। নতুবা এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে বিশ্বখ্যাত এই গ্রে-হাউন্ড কুকুর। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়েত মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম বলেন, সরাইলের ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে বিখ্যাত গ্রে-হাউন্ড কুকুরকে বাদ দেওয়া যাবেনা। দেশ বিদেশে এই কুকুর সরাইলের পরিচিতি বহন করে। সরাইলে এই কুকুরের একটি প্রজনন কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন